নুরুল আমিন হেলালী::
কক্সবাজার শহর থেকে শুরু করে প্রতিটি উপজেলায় গড়ে উঠা হাসপাতাল,ক্লিনিক,ফামের্সী ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ওষুধ কোম্পানীর দৌরাত্ব আশংকাজনকহারে বেড়ে গেছে। এমআর নামধারী এসব ওষুধ ব্যবসায়ীদের কারণে ডাক্তারের কাছে আসা রোগীরা পর্যন্ত অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। একজন মূমুর্ষ রোগীর চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলেই দেখা মিলে ডজন ডজন ওষুধ বিক্রির প্রতিনিধি বা এম.আর। বিশেষ করে সদর হাসপাতালের গেইট এলাকা সবসময় এম আরদের দখলে থাকায় রোগী ও রোগীর স্বজনদের চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এছাড়া সদর হাসপাতাল গেইটের প্রবেশ পথে গোলচত্বর স্থানে এম আরদের শত শত মোটর সাইকেল পার্কিং করে রাখায় রোগীদের যাতায়াত বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রোগীদের। সদর হাসপাতালে কোন রোগী ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নিতে চেম্বারে প্রবেশ করলেই দেখা যায় ওই চিকিৎসকের সঙ্গেই বসে গল্পে মেতে রয়েছেন কয়েক এম.আর। আবার কেউ কক্ষের বাইরে অপেক্ষা করছেন। রোগীরা চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রই জোঁকের মতো জেঁকে ধরে ডাক্তার প্রদত্ত প্রেসক্রিপশন দেখছেন। এ সময় অনেক রোগীকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এ অবস্থায় রোগী বা রোগীর স্বজনরা আগে ওষুধ নিয়ে রোগী বাঁচাবে নাকি প্রেসক্রিপশনটি এম আরদের হাতে দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ? এই প্রশ্ন এখন সচেতন মহলের মুখে মুখে। ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিরা সঙ্গে সঙ্গে ওই চিকিৎসক কোন কোম্পানীর ওষুধ লিখেছেন তা নোট বুকে লিখে পরবর্তীতে উপঢৌকন সামগ্রীসহ ওই চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাতে মিলিত হচ্ছেন। ডাক্তারের চেম্বার, ফার্মেসি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিকেল সেন্টারগুলোতে এ ধরনের হয়রানী এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে কথা বলে জানা যায় বিভিন্ন চুক্তিতে চিকিৎসক, ফার্মাসিষ্ট ও হাতুড়ে চিকিৎসকদের তাদের কোস্পানীর ওষুধ লিখতে প্রভাবিত করেন তারা। এসব ক্ষেত্রে আবার যেসব ডাক্তারদের হাঁকডাক যত বেশী তাদের রেট তত বেশী। তবে এক্ষেত্রে অখ্যাত কোম্পানী গুলোর অপতৎপরতা সবচেয়ে বেশী বলে জানা গেছে। অন্যদিকে কিছু কিছু সৎ ও নিষ্টাবান প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরা ভালো কোম্পানীর ওষুধও লিখে থাকেন। সদর হাসপাতাল,প্রাইভেট ক্লিনিক,ডাক্তারদের চেম্বার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চিকিৎসকদের কর্মস্থলের আশপাশে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধি ঘুরাঘুরি করছে। প্রতিদিন সকাল ৯-১০টার পরই চিকিৎসকের পাশাপাশি হ্যান্ডসাম পরিপাটি পোশাক পরিহিত ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরাও হাসপাতালে উপস্থিত। অনেক সময় দেখা যায়, চেম্বারের সামনে রোগী ও স্বজনদের তুলনায় ওষুধ প্রতিনিধির সংখ্যা বেশী থাকে। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি ওষুধ কোম্পানী প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ধরনের উপহার-উপঢৌকন প্রদান করে ওষুধ বিক্রিতে নানাভাবে চিকিৎসক,ফার্মেসী ব্যাবসায়ী,হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে প্রলুব্ধ করছে। প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক ঘুরে কয়েক রোগী ও স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট-বড় সব ধরনের অপারেশনের জন্য আগে থেকেই নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার ওষুধ বিল রোগীদের স্বজনদের হাতে ধরিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে প্রত্যেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে নিজস্ব ফার্মেসী রয়েছে। ডাক্তার দেখালে কিংবা রোগী ভর্তি করালে নিজেদের ফার্মেসী থেকে ওষুধ বাধ্যতামুলক কিনতে হচ্ছে। ফলে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের বিল পরিশোধ করতে গিয়ে অর্ধেক চিকিৎসা করেই চলে যেতে হচ্ছে অনেক অসহায় রোগীদের। চিকিৎসক,ব্যক্তি ও প্রতিষ্টান ভেদে কোম্পানীগুলো প্রকাশ্যে কলম,প্যাড,চাবির রিং থেকে শুরু করে নগদ টাকা,টিভি-ফ্রিজ,ব্যবহারের গাড়ি,বাড়ির আসবাবপত্র,সেমিনার-সিম্পোজিয়াম খরচ স্বল্প ও দূরপাল্লার গাড়ি থেকে বিমানের টিকেট অবধি সরবরাহ করছে। তবে কয়েক চিকিৎসক জানান,কোম্পানীগুলোর আগ্রাসী মার্কেটিং নীতির ফলে দেশে অপ্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যাবহার বেড়ে চলেছে। অভিযোগ রয়েছে উপঢৌকনে প্রলোব্ধ হয়ে অনেক চিকিৎসক রোগীদের অখ্যাত কোম্পানীর অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দীর্ঘস্থায়ী বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়া অনেক অখ্যাত কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা চিকিৎসক ও ফার্মাসিষ্টদের কাছে ধর্ণা দিয়ে ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ বাজারজাত করছে। ফলে অশিক্ষিত,অর্ধশিক্ষিত ও দরিদ্র রোগীরা অসাধু ও অর্থলোভী চিকিৎসক-ফার্মাসিষ্টদের ফাঁদে পড়ে ভেজাল ও নি¤œমানের ওষুধ সেবন করে প্রতারিত হচ্ছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় চিত্রনায়িকা পরীমণির প্রথম স্বামী ইসমাইল হোসেন জমাদ্দার (৪২) নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ...
পাঠকের মতামত